ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে দ্বিধায় বাংলাদেশ : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদন

Oct 03, 2022

150

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে যেতে রাজি হয়েছেন। সফরসূচি ঠিক হলেও ভারতের প্রস্তাবিত দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তি করতে অনাগ্রহী শেখ হাসিনার সরকার। দেশের স্বার্থবিরোধী ওই চুক্তি করা নিয়ে অনেকটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে সরকার, যদিও ভারত ওই চুক্তি করতে বাংলাদেশকে বারবার বলে আসছে। প্রস্তাবিত ২৫ বছর মেয়াদি এই চুক্তির মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশে অস্ত্র (মিলিটারি হার্ডওয়্যার) বিক্রি করতে চাইছে। সেই সঙ্গে দু’দেশের হুমকির বিরুদ্ধে একযোগে অভিযানে যেতে চাইছে। এই চুক্তি হলে ভারত অস্ত্র কেনার শর্তে বাংলাদেশকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ (লাইন অব ক্রেডিট) দেবে, যা দিয়ে ভারত থেকে অস্ত্র কিনতে হবে। এর লাভ-ক্ষতি নিয়ে শংকিত বাংলাদেশ, তাই দেশটি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিরক্ষা চুক্তি নয়; বরং সমঝোতা স্মারক সই করতে চাইছে (কারণ তাতে কোনো সময়সীমা থাকে না)। এ নিয়ে দু’দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে দরকষাকষি চলছে। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর এরই মধ্যে দু’দফায় পিছিয়েছে। চীনের জাতীয় দৈনিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের বৃহস্পতিবারের এক প্রতিবেদনে এসব কথা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীন থেকে অস্ত্র কিনতে আগ্রহী বাংলাদেশ। কিন্তু ভারত সেটি মেনে নিতে পারছে না। সম্প্রতি বাংলাদেশ চীন থেকে দুটি সাবমেরিন কিনেছে। এটি নিয়ে ভারত প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের কয়েকজন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক বাংলাদেশের আদৌ সাবমেরিন কেনার দরকার আছে কিনা সেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ভারত থেকে অস্ত্র কিনতে আগ্রহী নয়, কারণ ভারত অন্য দেশের অস্ত্র সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল। তারা অন্য দেশ থেকে অস্ত্র কিনে তা বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে চাইছে, যেগুলোর মান নিয়ে সন্দিহান সেনা কর্মকর্তারা। কারণ ভারত নেপাল ও মিয়ানমারে নিন্মমানের অস্ত্র সরবরাহ করেছে। বাংলাদেশের সেনারা মনে করে, চীনের অস্ত্র তুলনামূলক সস্তা এবং সহজে ব্যবহারযোগ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেল বছরের ডিসেম্বরে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর ঢাকা সফর করেন। তখনই তিনি বৃহত্তর প্রতিরক্ষা সহায়তার ধারণাটি সামনে নিয়ে আসেন। নাম উল্লেখ না করে এই প্রস্তাবিত চুক্তি নিয়ে দরকষাকষিতে জড়িত বাংলাদেশের একজন শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, তিনি (ওই কূটনীতিক) ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় সফরে আসা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জয়শঙ্করকে সে দেশের প্রস্তাবের বিষয়ে বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের প্রতিরক্ষা সহায়তামূলক কার্যক্রম বিদ্যমান। দু’দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যকার সম্পর্কও উন্নীত হচ্ছে। সন্ত্রাসের হুমকি যৌথ উদ্যোগেই মোকাবেলা করতে চাই আমরা। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি কোনো প্রতিরক্ষা চুক্তিতে যাওয়ার সময় এখনও হয়নি।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাও এভাবে ঋণ নিয়ে অস্ত্র কিনে সেনাবাহিনীকে সমর সাজে সদা প্রস্তুত রাখতে আগ্রহী নন। কারণ এ দেশে বেশ কয়েকবার সেনা অভ্যুত্থান হয়েছে। সেনা অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার বাবা বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। বাংলাদেশে সিভিল-মিলিটারি সম্পর্ক সম্প্রতি কিছুটা পরিপক্ব হয়েছে, যেটিতে ছেদ পড়–ক শেখ হাসিনা তা চাইছেন না। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা চীন ও ভারত দু’টি দেশের সঙ্গে ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক রাখতে চাইছেন। সেই সুযোগও তার রয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বরাবরই ভালো। অন্য দিকে, প্রতিরক্ষা সহায়তা ও উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়ার মধ্য দিয়ে বেইজিংও ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন করতে চাইছে।

Social Share :
Comments

Comments

  • It is a long established fact that a reader will be distracted by the readable content of a page when looking at its layout. The point of using Lorem...
  • It is a long established fact that a reader will be distracted by the readable content of a page when looking at its layout. The point of using Lorem...
  • It is a long established fact that a reader will be distracted by the readable content of a page when looking at its layout. The point of using Lorem...